ভাষণ

জাতীয় পার্টির সংবাদ সম্মেলন সকাল -১০টা
৩১মে, ২০১৬ইং মাননীয় চেয়ারম্যানের কার্যালয়

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

সুপ্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
আসসালামু আলাইকুম। জাতীয় পার্টি ও আমার পক্ষ থেকে আপনাদের জানাচ্ছি শুভেচ্ছা। আজ আপনারা আমাদের আহবানে সাড়া দিয়ে এখানে সমবেত হয়েছেন সে জন্য ধন্যবাদ ও কৃজ্ঞতা জানাচ্ছি। চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে জাতীয় পার্টির প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার জন্য আজ আমরা আপনাদেরকে ডেকেছি।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপ নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর আমরা কিছু পর্যবেক্ষন আপনাদের সামনে পেশ করেছিলাম। আমরা বলেছিলাম অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হচ্ছে না। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে প্রশাসন ও কোন কোন ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে সরকার দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে। জোড়, জবরদস্থি, জালভোট, ভোটকেন্দ্র দখল, কারচুপি ইত্যাদির মাধ্যমে সরকার দলীয় প্রার্থীকে জয়যুক্ত করা হচ্ছে।
আমরা আরো বলেছিলাম, নির্বাচনের নামে প্রহসন চলছে। এ রকম অবস্থা চলতে থাকলে নির্বাচনের প্রতি মানুষ আস্থা ও আগ্রহ হারাবে। সরকারী দলের বাইরে প্রার্থী পাওয়া যাবে না, মানুষ ভোট দিতে আসবে না। এ পরিনতি কারো জন্যই মঙ্গলজনক হবে না।
আমরা নির্বাচন কমিশন ও সরকারের কাছে আহবান জানিয়েছিলাম, যাতে পরবর্তীতে এ অবস্থার উন্নতি হয়। অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তনের আশ্বাস দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে আজ ৫ম ধাপের পর আমরা বলতে বাধ্য হচ্ছি অবস্থার উন্নতিতো দুরের কথা ক্রমান্বয়ে অবনতির ধারা অব্যাহত আছে।
সংঘাত, সহিংসতা, রক্তপাত ও মৃত্যুর ঘটনায় এবারের নির্বাচন রেকর্ড করেছে, জালভোট প্রদান, প্রকাশ্যে সিলমারা, ব্যালট পেপার ছিনতাই, চেয়ারম্যানের ব্যালট আওয়ামীলীগের কর্মীরা নিজ হাতে সিল মেরে শুধুমাত্র মেম্বারের ব্যালটটিতে নির্বাচন করা ও ভোট কারচুপির নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিনত হয়েছে। চলছে লাশের মিছিল বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য থেকে জানাযায় এ পর্যন্ত ১১৭জনের প্রানহানীর ঘটনা ঘটেছে। আহত হয়েছে প্রায় ৯হাজার। এ সব সংঘর্ষের নেপথ্যে রয়েছে সার্বিকভাবে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় ভাবে সরকারী দল মনোনীত ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের হিসাব নিকাশ। যার কারনে এ সংঘাত মোকাবেলা আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে চরম হিমসিম খেতে হয়। কোন কোন স্থানে প্রশাসনের লোকজন এমনকি আইন-শৃংখলা বাহিনীও এই ভোট কারচুপি ও জালভোট প্রদানের সাথে জড়িত হয়েছে বলে অভিযোগে জানাযায়।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
আমরা মনে করি, এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের উদাসীনতা ও ব্যর্থতার কারনে। প্রথম থেকেই প্রশাসন ও আইন-শৃংখলা বাহিনীর উপর কমিশনের তেমন কোন নিয়ন্ত্রণ ছিল না বলে প্রতীয়মান হয়েছে। দিন দিন তাদের ব্যর্থতা আরো পরিস্কার হয়ে গেছে। অনেক স্থানে প্রার্থীরা তাদের মনোনয়ন পত্র পর্যন্ত জমা দিতে পারেনি। দেশের অধিকাংশ এলাকায় কোন ভোট হয়নি। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা তা নিজেদের পক্ষে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কেন্দ্রসমূহ দখল, এজেন্টদের বের করে দেয়া, জালভোট প্রদান ও ভয়-ভীতি প্রদর্শনের মহোৎসব চলেছে। ।
ইতিমধ্যে জাতীয় পার্টির অনেক স্থানে পার্টি মনোনীত প্রার্থীদের ওপর হামলা, মারধর, বাড়ীঘর ও নির্বাচনী অফিস ভাংচুর করা হয়েছে। উপরন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের প্রার্থীদের নানাভাবে হয়রানী করা হচ্ছে। যে সকল ইউনিয়ন সমূহে উপরোক্ত ঘটনা ঘটেছে বলে আমাদের জানানো হয়েছে তার একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা আলাদাভাবে সংযুক্ত করা হলো।
এককথায় বলাযায়, নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পুর্ন ভেঙ্গে পড়েছে। নির্বাচন কমিশন একটি অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে। এ সংস্থাটির উপর মানুষের আস্থা এ মুহুর্তে শুন্যের কোটায় বললে অত্যুক্তি হয় না। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রশাসনের তরফ থেকে যে নিরপেক্ষ ভূমিকা প্রয়োজন ছিল। প্রায় ক্ষেত্রেই তার ব্যত্যয় দেখা গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে যথাযথ সহযোগিতা দেয়ার বিষয়েও ব্যর্থতা প্রতীয়মান হয়। এ সব বিষয় দেশ ও জাতির জন্য সুখকর নয় ও ভবিষ্যতের জন্য মঙ্গলজনক নয়।
আমরা এখনও আশা করি যে, ৬ষ্ঠ ও শেষ ধাপে নির্বাচন কমিশন ও সরকার, দেশ ও জাতির স্বার্থে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা নিবেন।