জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের বলেছেন, করোনার কারণে লকডাউন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা দীর্ঘস্থায়ী হলে দেশে দুর্ভিক্ষের অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। তাতেও জীবন বিপন্ন হবে। মহামারীর কারণে জীবিকা হারিয়েছে কোটি কোটি মানুষ। তাদের মধ্যে যারা হতদরিদ্র তাদের না খেয়ে থাকার অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি আরও বলেন, জীবিকা হারিয়ে নতুন দরিদ্র সৃষ্টি হয়েছে প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ মানুষ এবং এ সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। আর্থিক ও খাদ্য সহায়তা দিয়ে এসব দরিদ্র ও নব্য দরিদ্রকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। সামাজিক সুরক্ষা খাত থেকে সাহায্যপ্রাপ্ত মানুষের মধ্যে ৪৬ শতাংশ সরকারি কোনো সাহায্য পাওয়ার উপযুক্ত নয়। অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক প্রাপক অনিয়মের মাধ্যমে প্রকৃত প্রাপককে বঞ্চিত করে এ সুবিধা ভোগ করছে। জি এম কাদের বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে প্রতিদিন কোনো না কোনো খবর প্রকাশিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে মাননীয় মন্ত্রীসহ দায়িত্বপ্রাপ্তরা দুর্নীতির বিষয়টি আমলে নিচ্ছেন বলে মনে হয় না। ৪ টাকার মাস্ক ৩৫০ টাকায় কেনা হচ্ছে। এগুলো সত্য হলে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
জি এম কাদের আরও বলেন, যতই অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হোক, সুশাসন না থাকলে দুর্নীতি, অপচয় ও সমন্বয়হীনতার কারণে বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। সুশাসন না থাকলে অর্থ বরাদ্দের সুফল যাদের উদ্দেশে বরাদ্দ দেওয়া হয় তারা লাভ করেন না। এক কথায় সুশাসন ছাড়া বাজেট তৈরি ও বাস্তবায়ন সম্পূর্ণ অর্থহীন।
বিরোধীদলীয় উপনেতা বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে কভিড-১৯-এর টিকা প্রয়োগের কথা বলা হলেও আমদানির জন্য এ খাতে আলাদা কোনো অর্থ বরাদ্দের উল্লেখ নেই। টিকা সংগ্রহ এখন পর্যন্ত প্রকৃত অর্থে সুনির্দিষ্ট ও সুনিশ্চিত বলা যায় না। ফলে টিকা দেওয়ার কাজ পুনরায় শুরু ও শেষ কীভাবে ও কবে হবে কেউ জানে বলে মনে হয় না। জি এম কাদের বলেন, ভ্যাকসিন, ওষুধ, ডাক্তার, নার্স, হাসপাতাল, টেস্টিং ল্যাবরেটরি, টেকনোলজিস্ট, পিপিই, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ইত্যাদির যথেষ্ট পরিমাণ প্রয়োজন জীবন রক্ষার জন্য। তিনি বাজেট প্রায় গতানুগতিক উল্লেখ করে আরও বলেন, জনগণ প্রত্যাশা করেছিল এ বাজেট হবে প্রাথমিকভাবে জীবন ও জীবিকা রক্ষার। বিরোধীদলীয় উপনেতা বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। দেশি ব্যাংকগুলোর বেশির ভাগ রুগ্ন। এগুলোর ওপর নির্ভরশীল হওয়া কতটা বাস্তবসম্মত? তা ছাড়া এতে ব্যাংকের তারল্য সংকট বাড়ার আশঙ্কা থাকে।
জি এম কাদের বলেন, বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট গত পাঁচ বছরে ১ হাজার ২৪টি অর্থ পাচার ঘটনার প্রমাণ পেয়েছে। বিএফআইইউ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কাছে অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তথ্য-প্রমাণসহ প্রতিবেদন পাঠিয়েছ। কিন্তু এখন পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, এমন কোনো তথ্য নেই। ২০১৯ সাল পর্যন্ত সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানতের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা। গ্লোবাল ফাইন্যানশিয়াল ইনটিগ্রিটির মতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাণিজ্যের আড়ালে প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে পাচার হয় প্রায় ৬৪ হাজার কোটি টাকা।