
কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের-এর বক্তব্য।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
পরম শ্রদ্ধেয় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান, সাবেক রাষ্ট্রপতি, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ, শ্রদ্ধেয় সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম রওশন এরশাদ, শ্রদ্ধেয় পার্টির মহাসচিব, প্রেসিডিয়াম সদস্যবৃন্দ, কেন্দ্রীয় সদস্যবৃন্দ, মাননীয় মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত নেতাকর্মী ভাই ও বোনেরা আসসালামু আলাইকুম,আদাব। আপনাদের জানাই ভক্তি, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। দুর দুরান্ত থেকে যারা এসেছেন তাদের জন্য স্বাগতম, অভিনন্দন।
দেশের রাজনীতি আজ অনিশ্চিত গন্তব্যের পথে। সামনের জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিদিন অস্থিরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এ অস্থিরতা নতুন নয়। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের রাজনীতি সোজা পথে চলছে না। হিংসাতœক আন্দোলন, রক্তপাত, খুন, ঘুম, অপহরন পাল্লা দিয়ে এগিয়ে চলছে। রাজপথের আন্দোলন স্থিমিত হলেও রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটছে না। অস্থিরতা, বাহ্যত তেমন দৃশ্যমান না হলেও ভিতরে ভিতরে অস্বস্থি ও শঙ্কা মানুষকে বিচলিত করছে।
রাজনৈতিক অস্থিরতার কারনে বাংলাদেশে চলছে অর্থনৈতিক মন্দা, সামাজিক সমস্যা সমূহ মাথা চাড়া দিচ্ছে, ব্যক্তিগত জীবনে উৎকন্ঠা নিয়ে সাধারন জনগন দিন অতিবাহিত করছে।
রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় কারনে বিনিয়োগ, দেশী বা বিদেশী কোনটাই তেমন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বেকার সমস্যা প্রবল আকার ধারন করেছে। বিনিয়োগের অভাবে চাকুরীর সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছেনা। কর্মক্ষম উপযুক্ত ব্যক্তিরা চরম হতাশায় ভুগছে।
তরুন-তরুনীরা মাদকের দিকে ঝুকছে। মাদকের রমরমা ব্যবসার সাফল্যের সঙ্গে সঙ্গে জাতীর ভবিষ্যৎ আমাবস্যার গভীর কালো অন্ধকারের পথে ধাবিত।
অসামাজিক, দুস্কৃতিকারী নানান কর্মকান্ড উতোরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। খুন, ডাকাতি, ধর্ষন, চুরি চামারী, চাঁদাবাজী, দখলবাজী, রাহাজানি, গুম ইত্যাদি ঘটনা নিত্য নৈমিত্তিক। এগুলি দমনের নামে নিরীহ মানুষদের উপর নির্যাতন, ঘুষ গ্রহন, মামলা, অপহরন, এমনকি বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড সংঘটিত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে।
সঙ্গে নিত্যদিনের সাথী দুর্ঘটনায় অপমৃত্যু, মোটরগাড়ী, নৌযান, বিমান, ট্রেন ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনার খবর বলে শেষ করা যাবেনা।
এ প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের অর্জন হিসাবে, ‘স্বল্প উন্নত দেশ’ থেকে ‘উন্নয়নশীল দেশে’ রুপান্তরের প্রথম ধাপ অতিক্রম বা ‘নি¤œ আয়’ থেকে ‘নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশ’ হওয়ার কাহিনী সাধারন মানুষের কাছে সুকান্তের কবিতার ভাষায় ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী-গদ্যময়’,‘পুর্নিমা-চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি’ বলে প্রতিয়মান হচ্ছে।
ঘটনাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ততই বাড়ছে। সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও ব্যক্তিগত অস্থিরতার বৃদ্ধি ঘটছে।
রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারন নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা। দুটি প্রধান প্রতিপক্ষ সরকার ও তার প্রধান প্রতিপক্ষ নির্বাচন প্রশ্নে নিজ নিজ অবস্থানে অনড়। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে কোন মধ্যবর্তী স্থানে আসার ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠান হবে এমন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ফলে নির্বাচন পূর্ব, নির্বাচনের সময় ও নির্বাচন উত্তর পরিস্থিতি সাংঘর্ষিক বা অশান্তিপূর্ন হবে ধারনা করা যায়। কোন পর্যায়ে কখন কতটা হিংসাতœক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে সেটা আন্দাজ করা যাচ্ছে না। নির্বাচনে সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ শেষ পর্যন্ত অংশগ্রহন করবে কিনা সেটাও অনুমান করা যাচ্ছে না। মানুষ এ সকল শঙ্কা থেকে, অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি চায়। মানুষ এ অবস্থান পরিবর্তন চায়, মানুষ শান্তি চায়। এ পরিবর্তন দিতে পারবে জাতীয় পার্টি, যদি জনগন সুযোগ দেয়।
দেশের দায়িত্ব গ্রহনের সময় আমাদের নেতা আলহাজ্ব হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ জনগনের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন, দেশ পরিচালনায় জনগনকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। ক্ষমতা ত্যাগের সময় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ আলোচনা ও আপোষ মিমাংসার মাধ্যমেই সেটা করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ক্ষমতা গ্রহনে রক্তপাত করেননি ক্ষমতা আকরে রাখার জন্য সহিংসতা করেননি।
সে কারনে বলা যায়, জাতীয় পার্টি শান্তির দল। এখনও জাতীয় পার্টি চায় আলাপ আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ন উপায়ে রাজনীতি এগিয়ে যাক। দেশ স্বস্থি ও সমৃদ্ধির পথে অগ্রসর হোক। সে জন্যই আমরা বলি, ‘শান্তির জন্য পরিবর্তন, পরিবর্তনের জন্য জাতীয় পার্টি।’ তবে, অনেকের মনে একটা প্রশ্ন আসতেই পারে জাতীয় পার্টি কি দায়িত্ব পালনের ক্ষমতা পাবে বা ক্ষমতার কাছাকাছি থাকবে?
সব দল যদি নির্বাচনে অংশগ্রহন করে, তবে ধারনা করি প্রধানতঃ দু’টি ধারায় বিভক্ত হবে জনগন ও সে কারনে রাজনৈতিক দলসমূহ। একটি ধারা চাইবে বর্তমান সরকার আবার নির্বাচিত হোক, বর্তমান ধারাবাহিকতা বজায় থাকুক। অপর ধারাটি চাইবে বর্তমান সরকার পরিবর্তিত হোক নতুন সরকার নতুন আঙ্গিকে দেশকে পরিচালনা করুক।
বাংলাদেশে এখন প্রধানতঃ তিনটি রাজনৈতিক দল যাদের দেশ পরিচালনার অভিজ্ঞতা আছে ও সকল নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থী দেয়ার মত সংগঠন ও সমর্থক আছে। সেগুলি হল, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ও জাতীয় পার্টি। বাকী দুটি দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা যত হাড্ডাহাড্ডি হবে ততই নিয়ামক শক্তি হিসাবে জাতীয় পার্টির দাম বাড়বে। কারন জাতীয় পার্টি যে ধারাকে বা জোটকে সমর্থন জানাবে তারাই সরকার গঠন করবে। জাতীয় পার্টি যে দিকে ভর দিবে সে পক্ষের পাল্লা ঝুকে পড়বে। অর্থাৎ যে কোন প্রেক্ষিতে, জাতীয় পার্টি যে কোন জোট সরকারের অংশ হবে। ঠিক মত দরকষাকষি করতে পারলে, সে সরকারের নীতি নির্ধারনে ও তা বাস্তবায়নে জাতীয় পার্টি গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখতে পারবে।
যদি সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ কোন কারনে নির্বাচনে অংশ গ্রহন থেকে বিরত থাকে, সে ক্ষেত্রেও দু’ধারার জনগোষ্ঠি বর্তমান থাকবে, সরকারের পক্ষে ও বিপক্ষে। বিপক্ষ রাজনৈতিক জনগোষ্ঠীর আশ্রয়স্থল হিসাবে জাতীয় পার্টি রাজনৈতিক মঞ্চের ভূমিকা রাখতে পারবে। তখন, যদি নির্বাচনে জনগনের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহনের পরিবেশ থাকে ও জনগন অংশগ্রহন করে, জাতীয় পার্টি সবকটি আসনে প্রার্থী দিয়ে সে সকল মানুষের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটাতে পারবে। দেশের বেশীর ভাগ মানুষ সরকার পরিবর্তন কামনা করলে জাতীয় পার্টি সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করতে পারবে।
এখানে একটা বিষয় বিশেষভাবে উপলব্দি করতে হবে দেশের সিংহভাগ মানুষ অংশগ্রহন করলে নির্বাচন হবে অংশগ্রহনমূলক, কোন কোন দল নির্বাচনে অংশ না নিলেও। অর্থাৎ সে নির্বাচন ঐ মাপকাঠিতেই অগ্রহনযোগ্য বলা যাবে না।
জাতীয় পার্টি শুধু শান্তির দল নয়, জাতীয় পার্টির শাসন আমল ছিল সমৃদ্ধির, সুশাসনের। আইনের শাসন ছিল মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত ছিল। জাতীয় পার্টি দেশ পরিচালনার দায়িত্বের ভাগ নিতে পারলে বা সম্পুর্ন দায়িত্ব নিলে দেশে শান্তি আসবে, সমৃদ্ধি আসবে, জনগনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। সে লক্ষ্য অর্জন কোন কঠিন বিষয় নয়, বরং রাজনীতির গতি প্রকৃতিতে অত্যন্ত স্বাভাবিক পরিনতি মনে হচ্ছে।
হতাশার সুযোগ নেই, সামনে আছে আশার আলো। আলোর পথে এগিয়ে যেতে হবে সবাইকে সম্মিলিত ভাবে। জয় আমাদের নিশ্চিত, ইনশআল্লাহ। খোদা হাফেজ।